কমলগঞ্জে খরায় চা বাগান পুড়ছে, ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন

Daily Inqilab এম এ ওয়াহিদ রুলু,কমলগঞ্জ

২০ মার্চ ২০২৫, ০৫:৩৮ পিএম | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৫:৩৮ পিএম

দীর্ঘ অনাবৃষ্টিতে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন চা-বাগানে চা-গাছ বিবর্ণ হয়ে মারা যাচ্ছে। নদনদী, ছড়া, জলাশয় ও লেক শুকিয়ে যাওয়ায় চাহিদামতো সেচ দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। চা উৎপাদনে ভাটা পড়েছে। নতুন কুঁড়ি আসছে না চা গাছে। তাই কাঁচা পাতা উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে না। ক্ষতি হচ্ছে নতুন প্লান্টেশনের। ফলে চায়ের উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
 

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মৌসুমের শুরুতেই চা শিল্প প্রতিকূলতার মুখে পড়ায় কমে যাচ্ছে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা।


সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলায় ২২টি চা-বাগান রয়েছে। এর মধ্যে অনেক চায়ের টিলা শুকিয়ে যাচ্ছে। তাপদাহ আর অনাবৃষ্টির কারণে বাড়ছে না চা-গাছের কুঁড়ি। আসছে না নতুন পাতাও। খরায় নতুন সৃজিত চা-এর ৩০ শতাংশ চারাগাছ ও ১০ শতাংশ পুরাতন চা-গাছ পুড়ে গেছে। চা-বাগান কর্তৃপক্ষ কিছু কিছু টিলায় নিয়মিত সেচ দিয়ে এ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছে। গত তিন-চার মাসে কমলগঞ্জে হালকা কোনো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চলমান দীর্ঘ অনাবৃষ্টির কারণে উপজেলার চা-বাগানের নতুন সৃজিত চা-গাছগুলো রোদে পুড়ে মারা যাচ্ছে। অনাবৃষ্টির ফলে চা-বাগানের নার্সারি বাগানসমূহেও ফড়িংয়ের আক্রমণেরও শিকার হচ্ছে। শীত মৌসুমে চা-বাগানগুলোতে পুরাতন বৃদ্ধ চা-গাছ উপড়ে ফেলে সেখানে নতুন করে চারা-গাছ লাগানো হয়। বাগানের প্লান্টেশন এলাকার চা-গাছ কাটিং (আগাছা ছেঁটে দেওয়া) হয়। এসব কাজের পর নিয়মিত সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
 


চা-বাগানের একটি সূত্র জানান, এ সময়ে সাধারণত চা-বাগান অঞ্চলে ১৫ সেন্টিমিন্টার বৃষ্টিপাত হয়। তবে এ বছর এ সময়ে শুরু হয়েছে খরা। মাঘ মাসের বৃষ্টি চা-বাগানের জন্য খুবই উপকারী। মাঘে কোনো বৃষ্টি না হওয়ায় চলমান অনাবৃষ্টিতে চা-বাগান প্লান্টেশন এলাকাধীন পানির উৎস খুঁজে তা আটকিয়ে কিছু অংশে সেচ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আর যেসব প্লান্টেশন এলাকায় সেচ দেওয়া যাচ্ছে না, সেখানকার নতুন সৃজিত চারাগাছ মরে যাচ্ছে।
 


চাশিল্পে কর্মরতদের ধারণা, আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে চাশিল্পেও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চা-গাছ মরে যাওয়ার প্রধান কারণ প্রতিকূল আবহাওয়া। তাদের মতে চা-গাছের ছায়াদানকারী গাছ উজাড় বন্ধ করা ও চা-বাগানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীনালা, ছরা, খাল খনন করে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই সমস্যা সমাধান করতে হবে।


কমলগঞ্জ ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) মাধবপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক দিপন কুমার সিংহ বলেন, ‘গত বছরের নভেম্বর এর দিকে অল্প কিছু বৃষ্টি হয়েছিল, তারপর আর হয়নি। এখন পাতা তুলার মৌসুম। কিন্তু যে হারে পাতা চয়ন করার কথা সেভাবে হচ্ছে না। তিনি বলেন, এখন প্রচুর খরা তার জন্য কিছু গাছ মারা যাচ্ছে। বৃষ্টি হলে স্বাভাবিক হবে চা গাছগুলো।’


বাংলাদেশ চা সংসদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বলেন, ‘চা-গাছ রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েও পানির অভাবে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এমনিতেই চা রপ্তানি আগের তুলনায় কমে গেছে। এরপর যদি উৎপাদনঘাটতি হয়, তাহলে তার প্রভাব হবে অন্যরকম।’


বাংলাদেশ টি এস্টেট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এখন কোনো উৎপাদন নেই। তবে দু-একটি বাগানে পাতা চয়ন শুরু হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুকূল নয়। বর্তমানে প্রতি কেজি চায়ের উৎপাদনে খরচ হয় ২২০ টাকা আর বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। কেজিতে ৪০ টাকা ঘাটতি দিয়ে চাশিল্প কতক্ষণ টিকে থাকবে।’


সরকারি মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) পরিচালক মহসিন মিয়া মধু সাংবাদিকদের জানান, ‘চায়ের উৎপাদন খরচ অব্যাহতভাবে বাড়ছে। যা বাগান মালিকদের জন্য অস্বস্তিকর।’


বাংলাদেশ চা সংসদের সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান ও জেমস ফিনলে চা কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার গোলাম মোহাম্মদ শিবলী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘২০২৪ সালে চা-বাগানে গ্রীষ্মকালে তীব্র খরা বয়ে গেছে। তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ছিল। এই তাপমাত্রা চা-গাছের জন্য অনুকূল ছিল না। এছাড়া সার, সেচ, কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি, উৎপাদন খরচের কম মূল্যে চা বিক্রির প্রভাবের কারণে চায়ের উৎপাদন কম হয়েছে। এছাড়া জাতীয় উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ১০ ভাগ অবদান রাখা এনটিসি চা-বাগানগুলোতে বকেয়া বেতন আদায়ের দাবিতে গত চা মৌসুমে দীর্ঘ সময় জুড়ে শ্রমিক ধর্মঘট চলায় বাগানের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এসব মিলিয়ে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাঘাত ঘটে।’

বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নিকলী খেলাফত মজলিসের আলোচনা ও ইফতার অনুষ্ঠিত
পুরো মাহে রমজান উপলক্ষে ফ্রি ইফতার বিতরণ
আগামী নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে : সাঈদ সোহরাব
নেতাকর্মীদের মিলনমেলায় পূর্ণ  সিলেটে বিএনপি পরিবারের ইফতার মাহফিল
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হোক, তা আমরা চাই না: জিএম কাদের
আরও
X

আরও পড়ুন

নিকলী খেলাফত মজলিসের আলোচনা ও ইফতার অনুষ্ঠিত

নিকলী খেলাফত মজলিসের আলোচনা ও ইফতার অনুষ্ঠিত

পুরো মাহে রমজান উপলক্ষে ফ্রি ইফতার বিতরণ

পুরো মাহে রমজান উপলক্ষে ফ্রি ইফতার বিতরণ

দিল্লিতে বিচারপতির বাংলো থেকে টাকা উদ্ধার নিয়ে নতুন নাটক

দিল্লিতে বিচারপতির বাংলো থেকে টাকা উদ্ধার নিয়ে নতুন নাটক

বিষক্রিয়ার আশঙ্কা, ভারতের বাজার থেকে সরানো হল কয়েক হাজার কাশির ওষুধ

বিষক্রিয়ার আশঙ্কা, ভারতের বাজার থেকে সরানো হল কয়েক হাজার কাশির ওষুধ

আরও ২৯৫ ভারতীয়কে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

আরও ২৯৫ ভারতীয়কে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

আগামী নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে : সাঈদ সোহরাব

আগামী নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে : সাঈদ সোহরাব

ইউটিউব দেখে নিজেই নিজের পেট কেটে ১১টা সেলাই যুবকের!

ইউটিউব দেখে নিজেই নিজের পেট কেটে ১১টা সেলাই যুবকের!

জমানো টাকার যাকাত প্রদান প্রসঙ্গে।

জমানো টাকার যাকাত প্রদান প্রসঙ্গে।

রাস্তা সংস্কার চাই

রাস্তা সংস্কার চাই

ইতিকাফের ফজিলত

ইতিকাফের ফজিলত

অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক

অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক

হয়রানিমূলক মামলা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

হয়রানিমূলক মামলা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রশ্ন : আমার মা গত ২০১৭ সালে দীর্ঘ দিন কিডনি, ক্যান্সারসহ নানা জঠিল রোগে ভুগে আমার উপর বেশ রাগ, অভিমান নিয়ে মারা গেছেন। মা খুব অসহায় অবস্থায় মারা যান। বড় সন্তান হিসেবে তার প্রতি দায়িত্ব পালন করিনি। অনেক অবহেলা করেছি, রাগারাগি করেছি, তার চিকিৎসাও ঠিকমতো করিনি। আমি এখন খুব মর্মাহত, ক্ষমা পাওয়ার উপায় আছে কি?

প্রশ্ন : আমার মা গত ২০১৭ সালে দীর্ঘ দিন কিডনি, ক্যান্সারসহ নানা জঠিল রোগে ভুগে আমার উপর বেশ রাগ, অভিমান নিয়ে মারা গেছেন। মা খুব অসহায় অবস্থায় মারা যান। বড় সন্তান হিসেবে তার প্রতি দায়িত্ব পালন করিনি। অনেক অবহেলা করেছি, রাগারাগি করেছি, তার চিকিৎসাও ঠিকমতো করিনি। আমি এখন খুব মর্মাহত, ক্ষমা পাওয়ার উপায় আছে কি?

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কী বলছে?

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কী বলছে?

মাহে রমজান : অর্জন-বর্জন ও ঈমান নবায়ন

মাহে রমজান : অর্জন-বর্জন ও ঈমান নবায়ন

রমজান : মুমিন হৃদয়ের বসন্ত

রমজান : মুমিন হৃদয়ের বসন্ত

মহাকাশে হীরার গ্রহের সন্ধান, অবাক নাসার বিজ্ঞানীদের

মহাকাশে হীরার গ্রহের সন্ধান, অবাক নাসার বিজ্ঞানীদের

রমজানের রোজা যেভাবে ফরজ হলো

রমজানের রোজা যেভাবে ফরজ হলো

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণে যাকাতের ভূমিকা

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণে যাকাতের ভূমিকা

মূকাভিনয় দিবসে মূকনাট্য ‘ম্যাকবেথ’

মূকাভিনয় দিবসে মূকনাট্য ‘ম্যাকবেথ’